সহ- বার্তা সম্পাদক এস এম তারেক:
২৫ বছর হলো স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তখন ৭ বছরের মেয়েকে নিয়ে কেটেছে সীমাহীন কষ্টে। অন্যের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে কেটেছে ১২ টি বছর। সমস্ত কষ্টকে নিজের বুকে ধারণ করে মেয়েকে নিয়ে ভেসেছিলাম দুঃখের সাগরে। স্বামী আর কখনোই ফিরে দেখেনি। আজ আমার খুব আনন্দ লাগছে। আর করতে হবেনা ভিক্ষা, ঘুরতে হবে না অন্যের দ্বারে দ্বারে। এটা মনে পড়ে যেন একটু সুখের ছোঁয়া লেগেছে প্রাণে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে আর্থিক সহয়তা করেছে। আর্থিক সহায়তার সেই টাকা দিয়ে আমাদের চেয়ারম্যান একটি গরু কিনে দিয়েছে যাতে আমি স্বচ্ছলতা ফিরে পাবো। দীর্ঘ ১২ বছরের ভিক্ষা জীবনের অবসান ঘটলো আর কখনোই ভিক্ষা করবো না। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আনন্দে এমনটাই বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মোছাঃ সুফিয়া খাতুন(৬০)।
মোছাঃ সুফিয়া খাতুন বলেন, আর ভিক্ষা করবো না। প্রধানমন্ত্রী টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে দিয়েছে আমাদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল। আর কিছু টাকা আছে অন্য কাজ করবো। এই নিয়েই আমি চলবো। অন্যের দ্বারেদ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করা খুব কঠিন ও লজ্জার কাজ। অনুপায় হয়ে বেছে নিয়েছিলাম ভিক্ষার পথ। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আজ থেকে আর ভিক্ষা করবো না।প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেলাম। আর অন্যের দ্বারেদ্বারে ঘুরতে হবে না। গরু-ছাগল পুষবো আমার চলে যাবে।আজ আমার ১২ বছরের ভিক্ষা জীবনের অবসান ঘটলো।
শুক্রবার (১৬-০৯-২০২২ ইং) বিকেলে উপজেলার বামন্দী পশুহাটে বামন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল সুফিয়া খাতুনের হাতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আর্থিক সহয়তার টাকা দিয়ে তাকে একটি গরু কিনে দেন এবং বাড়তি টাকা তার হাতে তুলে দেন।
বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কমল জানান, ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার সুফিয়া খাতুনের হাতে তুলে দেয়া হলো।ভিক্ষা করা খুব লজ্জাজনক একটা পেশা। কিন্তু চক্ষু লজ্জা উপেক্ষা করে অভাবের তাড়নায় সে ভিক্ষা করতো। আজ সে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার পেয়ে খুব খুশি। সে আর কখনো ভিক্ষা করবে না। ৫১ হাজার ৫’শ ৪৭ টাকার মধ্যে ৪৭ হাজার টাকার দিয়ে একটা গরু আর বাকি টাকা তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আপনারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন সুস্থ থাকেন আর সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আর্থিক সহোযোগিতার টাকায় তাকে গরু কিনে দেওয়ার বিষয়ে তিনি আরো জানান, তার কাছে টাকা দিলে তার ছেলেমেয়েরা ভাগবাটোয়ারা করে নিবে সেজন্য তাকে গরু কিনে দেওয়া হয়েছে। গুরুটি লালনপালন করে আরো লাভবান হতে পারবে এবং আর্থিক সক্ষমতা ফিরে পাবে।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিস এবং বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় ১২ বছরের ভিক্ষা জীবনের আজ সমাপ্তি ঘটেছে মোছাঃ সুফিয়া খাতুনের। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষেরা চেয়ারম্যানের এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বামন্দী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ কামাল হোসেন,৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোছাঃ সাগরিকা খাতুন সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।