Home » নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মুজিবনগরে পালন করা হয়েছে মেহেরপুর মুক্ত দিবস

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মুজিবনগরে পালন করা হয়েছে মেহেরপুর মুক্ত দিবস

কর্তৃক xVS2UqarHx07
172 ভিউজ

আজকের মেহেরপুর ডেস্ক:

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল সহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মুজিবনগরে পালন করা হয়েছে মেহেরপুর মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী খ্যাত মুজিবনগর মেহেরপুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় একে একে ভেঙে যায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের শক্তিশালী সামরিক বলয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ৫ ডিসেম্বর বিকেল থেকে হানাদার বাহিনী গোপনে মুজিবনগর মেহেরপুর ছেড়ে পালাতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর সকালে মিত্রবাহিনী মেহেরপুর শহরে প্রবেশ করলে অবরুদ্ধ জনতা মিত্রবাহিনীর সাথে জয়ের উল্লাসে যোগ দেয়। রাজনৈতিক মর্যাদাপূর্ণ মেহেরপুর জেলা হয় হানাদার মুক্ত ।

তথ্যমতে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের পর পাকবাহিনী মেহেরপুরকে টার্গেটে পরিণত করে। সে অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল দুপুরে হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুর প্রবেশ করার সময় সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে নির্মম গণহত্যা চালায়। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত জনসাধারণ ঘর-বাড়ি ছেড়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।

এদিকে পাকবাহিনী এক সপ্তাহের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ভিটিআই এবং কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের দূর্গ গড়ে তোলে। এছাড়াও মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাশে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা হাইস্কুলে পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে গোটা মেহেরপুর পাকবাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জুন-জুলাইর দিকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলারা মেহেরপুরে ফিরে সেতু কালভার্ট ধবংস এবং টেলিফোন সংযোগ বিছিন্ন করে মাইন পুতে রেখে পাকবাহিনীর যোগাযোগ এবং খাদ্য সরবরাহে প্রবল বাধার সৃষ্টি করে। প্রতিরোধের মুখে আগস্ট মাসের ২ ও ৩ তারিখে মুজিবনগরের মানিকনগর ক্যাম্প উঠিয়ে মোনাখালিতে এবং গাংনীর কাথুলি ক্যাম্প উঠিয়ে ভাটপাড়াতে স্থাপন করতে বাধ্য হয় পাকবাহিনী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আহসান আলী খাঁন জানান, দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস ধরে পাকসেনারা রাজাকার ও পিস কমিটির সহায়তায় সাধারণ মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালাতে থাকে।

পাকসেনারা মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি, ওয়াপদা মোড়, পিরোজপুর, কোলা, বুড়িপোতা, গোভীপুর, শালিকা, রাজাপুর ও বাড়িবাঁকা, গাংনী উপজেলার কাজিপুর, তেরাইল, জোড়পুকুরিয়া, ভাটপাড়া কুঠি, সাহেবনগর ও হিন্দা এবং মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, বাগোয়ান ও রতনপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে নৃশংস গণহত্যা চালায়। যেখানেই গণহত্যা হয়েছে সেখানেই বধ্যভূমি রয়েছে। তার মধ্যে মেহেরপুর কলেজের উত্তরে বিস্তৃত খোলা মাঠ ও কালাচাঁদপুর ঘাট এবং গাংনীর ভাটপাড়া কুঠি অন্যতম বধ্যভূমি।

মেহেরপুর জেলার শেষ সীমানা খলিশাকুন্ডি এবং গাংনী উপজেলার গোয়ালগ্রাম, সাহেবনগর ও কাজিপুর মুজিবনগর উপজেলার রতনপুরসহ অন্তত ৫০টি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলেও কোনঠাসা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী।

যুদ্ধকালীন সময়ে পাকহানাদার বাহিনী সাধারণ মানুষদের ধরে শহরের ভোকেশনাল ও সরকারি কলেজের পিছনে নাটুদাসহ বিভিন্ন সেলে নিয়ে গিয়ে অসহ্য নির্যাতন চালাতো। ৫ ডিসেম্বর রাতে পাক হানাদার বাহিনী চলে যাবার সময় মেহেরপুরের ওয়াপদা, সদর উপজেলার দ্বীনদত্ত ব্রিজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে যায়। পাকবাহিনীকে বিতাড়িত করতে ৫ ডিসেম্বর মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদীতে আক্রমন করে মুক্তিবাহিনী। প্রতিরোধের মুখে চুয়াডাঙ্গার দিকে পালিয়ে যায় শত্রু সেনারা।

৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হুংকার দিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রবেশ করে। আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনন্দ করে। কিন্তু অসংখ্য বধ্যভূমি আর লাশ দেখে মেহেরপুরে প্রবেশ করার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। তারপরও স্বাধীনতার সেই অপার আনন্দ স্মরণীয়।

মুজিবনগর মেহেরপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে সোমবার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন ও মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে, সকাল সাড়ে ১০ টায় মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহি অফিসার সুজন সরকার, মুজিবনগর থানার ইনচার্জ আব্দুল হাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আহসান আলি খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান সহ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ।

পরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল মুজিবনগর শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

০ মন্তব্য

You may also like

মতামত দিন