Home » পরীক্ষায়  জানা গেল ঘটনা কাল্পনিক, গাংনীতে নবজাতককে নিয়ে গেছে জ্বিনেরা।

পরীক্ষায়  জানা গেল ঘটনা কাল্পনিক, গাংনীতে নবজাতককে নিয়ে গেছে জ্বিনেরা।

কর্তৃক xVS2UqarHx07
186 ভিউজ

 

গাংনী প্রতিনিধি:

 

জ্বিনের গল্প শোনা যায়  নানা গল্প কাহিনীতে। জ্বিনে মানুষ তুলে নিয়ে পরে ফেরত দিয়ে গেছে, জ্বিন মানুষের ওপর ভর করেছে, আবার কখনো কখনো জ্বিনে গাছের ডাল ভেঙ্গে চলে গেছে এমন ধরনের অনেক গল্প কাহিনি শোনা যায়  নানা- নানী,দাদা-দাদীদের মুখ থেকে ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি। জ্বিনে জোরপূর্বক প্রেসক্রিপশনসহ বাচ্চা  প্রসব করিয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে এমন ঘটনা সব গল্প কাহিনীকে হার মানিয়েছে।পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় ঘটনাটি ছিল নিছক কাল্পনিক। এমন কাল্পনিক ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওদা মটমুড়া গ্রামে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় ছয় বছর আগে তার মেয়ে আজমিরা খাতুনের সাথে একই উপজেলার খাসমহল গ্রামের ছহির উদ্দিনের ছেলে মোকাদ্দেস আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর কাজের সুবাদে সৌদি আরবে পাড়ি জমায় মুকাদ্দেস আলী। ছয় বছরের সংসার জীবনে একাধিকবার ছুটিতেও এসেছে জামাতা মোকাদ্দেস আলী। শেষবারের মতো প্রায় দশ মাস আগে ছুটি কাটিয়ে সে আবারো প্রবাসে ফিরে যায়। জামাতা বিদেশে যাওয়ার তিন মাস পর মেয়ে গর্ভবতী জানতে পেরে তাকে পিতার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গর্ভধারণের প্রায় চার মাস পর মেয়ে আজমিরা খাতুন তার পরিবারকে জানায় তার শোবার ঘরের মধ্যে দুটি সাপ দেখতে পেয়ে সাপ দুটিকে মেরে ফেলে। এরপর জ্বিন এসে প্রতিশোধ নিতে তার গর্ভের বাচ্চাকে মেরে ফেলা হবে বলে তাকে রাতে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখাতে শুরু করে।

গত রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে আজমিরা খাতুনের প্রসাব বেদনা উঠেছে বুঝতে পেরে তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। আজমিরা খাতুন জানায় গোসল করে তারপরে ডাক্তারের কাছে যাবে। একথা বলে তোয়ালে নিতে সে ঘর যায়। ফিরতে দেরি দেখে তার মা ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। গিয়ে ভিতরের দিক থেকে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। ডাকাডাকির একপর্যায়ে দরজা খুলে দেওয়া হয়। মা ভিতরে ঢুকেই মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিতে থাকেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন তার গর্ভে সন্তান নেই। এরপর থেকেই জ্বিনে জোরপূর্বক প্রসব করিয়ে বাচ্চা ও প্রেগনেন্সি টেস্টের রিপোর্টগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাজহারুল ইসলাম জানান, আজমিরা খাতুন গর্ভবতী অবস্থায় দুটি সাপ মেরেছিল সে কারণেই হয়তোবা জ্বিনেরা ছেলেকে নিয়ে গেছে এমন ঘটনা শুনতে পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যায়। সেখানেই ইউএনও  মহোদয় ও ডাক্তার এসেছিলেন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া তার শরীরের হাতে, পায়ে ও গলায় নখের আঁচড়ের দাগ দেখা গেছে।

সংবাদ পেয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাসুদুর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব হবে বলে জানান তারা।

পরিবারের লোকজন আজমিরা খাতুনকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত আটটার দিকে তিনি গর্ভবতী ছিলেন না বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাসুদুর রহমান।

 

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা গেছে আজমিরা খাতুন আদৌও গর্ভবতী ছিলেন না। এলাকায় যে আলোড়ন ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ঘটনার ছিল সম্পূর্ণটাই কাল্পনিক।

০ মন্তব্য

You may also like

মতামত দিন