Home » ঝিনাইদহ মহেশপুরে মুকুলের প্রায় এক দশক ধরে শিকল বন্দি জীবন

ঝিনাইদহ মহেশপুরে মুকুলের প্রায় এক দশক ধরে শিকল বন্দি জীবন

কর্তৃক ajkermeherpur
293 ভিউজ

মোঃ হাসান আলী, মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ পায়ে শিকল, সঙ্গে দুটি তালা, ভাঙাচোরা ঘরের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পশুর মতো বাঁধা, এভাবেই প্রায় এক দশক কেঁটে গেছে মানসিক প্রতিবন্ধী মুকুল হোসেন(৩৫) এর জীবন। এক দশক ধরে শিকলে বন্দি জীবন কাটলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না তার। বৃদ্ধা মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটান। মুকুল প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পেলেও মাঝে মাঝে ঔষুধ কিনতেই তা ফুরিয়ে যায়। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের টাকার অভাবে করানো যাচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা।

ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌর এলাকার বগা গ্রামের মৃত রিজাউল ইসলামের বড় ছেলে মুকুল হোসেন। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লুল করে পাড়া-মহল্লা মাতিয়ে রাখতো। শান্তশিষ্ট ছেলে হিসেবে গ্রামের সবাই তাকে আদর করতো। কিন্তু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। ২০/২২ বছর ধরে মানসিক সমস্যা দেখা দিলেও পায়ে শিকল পড়েছে ১০ বছর ধরে।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের এক ভাঙাচোরা ঝোপড়া ঘরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মুকুলকে। বাঁশের খুঁটিতে শিকলে বাঁধা তালায় ধরেছে জং, মরিচা পড়েছে শিকলে। রোদ বৃষ্টি কিম্বা ঝড়ের দিনে এখানেই বসবাস তার। কারো উপস্থিতি টের পেলে ভাঙা জানালা-দরজা দিয়ে উকিঝুঁকি মারতে থাকেন শিকলে বাঁধা মুকুল। কাছে কেউ গেলেই বলতে শুরু করেন মামু আমার মাকে দেখে রেখো, মা যেন হারিয়ে না যায় আরো কতো কি। ৪ ভাই বোনের মধ্যে মুকুল সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, ভাই দিনমজুর। অভাবের সংসার। পরিবার নিয়ে তাদের জীবন চলে কষ্টে। তাইতো মুকুলের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তার বৃদ্ধা মা অন্যের বাড়িতে ও ক্ষেত খামারে কাজ করে কোনোমতে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন।
তার মা ফিরোজ বেগম জানায়, গ্রামের সবাই মুকুলকে ভালো জানতো। ভাগ্য দোষে আর্থিক সমস্যার কারণে ১৩/১৪ বছর বয়সে ছেলের একশিরা রোগের আধুনিক চিকিৎসা না করাতে পেরে কবিরাজি চিকিৎসা করাই। ধীরে ধীরে ছেলের আজ এই অবস্থা। পায়ে শিকল পরিয়ে রাখতে হচ্ছে। লোকের ফসল, গাছের ফল পেড়ে নষ্ট করে ফেলতো। অনেক সময় মানুষজনও তাকে ধরে মারপিট করতো। শিকল না পরিয়ে রাখলে কোথায় যে চলে যায় খুঁজে পাওয়া যায় না। এ কারণে বাধ্য হয়েই পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন এর আগে অনেক জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়েছিলো। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারিনি।
নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পরিবারের পক্ষ থেকে উদার্থ আহ্বান, এই সমাজের বহু বৃত্তবান রয়েছে কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু লোক যদি আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে একটু আর্থিক সহায়তা করতেন ছেলেটির সু-চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। সকলের কাছে আমাদের এই আহ্বান।

০ মন্তব্য

You may also like

মতামত দিন